স্ট্রোক এর লক্ষণ
স্ট্রোক কি
মস্তিষ্কের রক্তনালীর একটি রোগ হল স্ট্রোক ও এটি মূলত মানুষের মস্তিষ্কে বড় ধরনের আঘাত হানে।বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুসারে,মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কের রক্তনালি ব্লক হয়ে গেলে ও কোষগুলো মরে গেলে বা ছিঁড়ে গেলে স্ট্রোক হয়। যে কোন তার শরীর কোষের রক্তসঞ্চালন সঠিকভাবে হওয়া প্রয়োজন কারণ রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শরীরের প্রত্যেকটি কষে অক্সিজেন পৌঁছায়। স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা এবং দ্রুত যদি রোগের চিকিৎসা না করা হয় তাহলে রোগীকে পঙ্গুত্ব বরণ এর পাশাপাশি তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটি যে কারও ক্ষেত্রে যে কোন সময় হতে পারে এবং আমাদের শরীরের হৃদপিণ্ড হল রক্তের একমাত্র জায়গা, এখান থেকে বিভিন্ন রক্তনালীর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশ পৌঁছে এবং মস্তিষ্কে কিছু রক্তনালীর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত হয়।
স্ট্রোক কেন হয়
চিকিৎসকদের মতে স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রোগ এবং মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোর জটিলতার কারণে আমাদের মস্তিষ্কে স্ট্রোক রোগীর হয়ে থাকে।কখনো রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেধে এবং ব্রেনের যেকোনো একটা অংশের সক্ষমতা নষ্ট করে দেয়ার পরে আমাদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এই রোগের।মূলত রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তক্ষরণের কারণে ব্রেনের একটি অংশ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এজন্যই স্ট্রোক একটি মারাত্মক রোগ।সাধারণত কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে ধীরে ধীরে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে থাকে, যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসহাই,অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল,ধূমপান,পারিবারিক সমস্যার কারণে মানসিক চাপে,হার্টের অসুখ,রক্ত জমাট বাধা আসুক,ক্যান্সার,অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ইত্যাদি আরো অনেক কারণ রয়েছে স্ট্রোক করার। অনেক সময় কোনো পূর্ব রোগ ছাড়াও হঠাৎ করে হয়ে যেতে পারে স্ট্রোক, এক্ষেত্রে বলা যায় যে হঠাৎ করে উত্তেজিত উত্তেজিত হওয়া,জন্মগত এনজাইমের সমস্যা,জন্মগত রক্তনালীর গঠনগত সমস্যা এবং অন্যান্য সমস্যা রয়েছে স্ট্রোকের।এজন্য বলা যায় যে শুধু বয়স্ক দেরি নয় একবারে তরুণদের মধ্যে স্ট্রোক হতে পারে।
স্ট্রোক কত প্রকার
সিডিসি(CDC= Centre for Disease Control and prevention) এর মতে স্ট্রোক হল তিন প্রকার-
1। ইশকেমিক স্ট্রোক :মস্তিষ্কের রক্তনালীর ভিতরে রক্ত জমাট বাধার পরে রক্ত সরবরাহ বিঘ্ন ঘটলে কিছু ব্রেনের শিশু মারা যায়, এটাই হলো ইসকেমিক স্ট্রোক। বেশিরভাগ 85% কি হলো ইশকেমিক স্ট্রোক। উচ্চ রক্তচাপ হলো স্ট্রোকের কারণ।
2। হেমোরেজিক স্ট্রোক:সাধারনত মস্তিষ্কের ভিতরে কোন রক্তনালি ছিঁড়ে গেলে হেমোরেজিক স্ট্রোক হয় এবং এই ধরনের স্ট্রোক এর তিন মাসের মধ্যে মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
3।মিনি স্ট্রোক:মস্তিষ্কের রক্তনালিতে অস্থায়ীভাবে অল্প কিছু সময়ের জন্য রক্ত সরবরাহ না হলে এ ধরনের স্ট্রোক হয়। যেটা খুব দ্রুতই আবার ভালো হয়ে যায়। মিনি স্ট্রোক রোগের পূর্বাভাস এবং এটি হওয়ার 48 ঘণ্টার মধ্যে 5% এবং এক সপ্তাহের মধ্যে 8%ও এক মাসের মধ্যে 12%এবং তিন মাসের মধ্যে 17%মানুষ বড় ধরনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে যায়।এজন্য এই ছোট স্ট্রোককে কোনরকমে অবহেলা করা উচিত নয়, এটি হলে খুব তাড়াতাড়ি নিকটবর্তী হাসপাতাল হাসপাতাল নিয়ে যে চিকিৎসা কাছ কি কি উচিত। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপসহ স্ট্রোকের রিক্স ফ্যাক্টর গুলো খুব তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। সঠিক খাবারের মাধ্যমে নিয়মিত এক্সারসাইজ করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, এছাড়া স্ট্রোক হলে পরবর্তী পুনরায় স্ট্রোকের ঝুঁকি চার গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
মিনি স্ট্রোকের লক্ষণ
মানুষের মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে স্বল্পতা বা ঘাটতি হলে মানুষের মস্তিষ্কের কোন বিশেষ একটি অংশের কার্যকলাপ ব্যাহত হয়,এই অবস্থাকে বলা হয় স্ট্রোক। অল্প কয়েক মিনিট অথবা অল্প কয়েক ঘণ্টার জন্য হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা বা ঝাপসা দেখাইত্যাদি এবং তারপর নিজে নিজে সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়া এরকম অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মূলত বলা হয় ট্রানসিয়েন্ট ইশকেমিক অ্যাটাক,আবার অনেকে বলে থাকে মিনি স্ট্রোক। যদিও মিনি স্ট্রোক দীর্ঘমেয়াদী অচলাবস্থা সৃষ্টি করে না, আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও এই মিনি স্ট্রোক একটি অগ্রিম সতর্কবার্তা।
প্রতি তিনজন মিনি স্ট্রোকের রোগীর মধ্যে দেখা যায় যে একজন অদূর ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গভাবে স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্যই আগেই জীবন চারণ পাল্টে ও চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো খুবই জরুরী।চলুন জেনে নেওয়া যাক মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ গুলো:
1।কথা হঠাৎ করে মাঝে মাঝে জড়িয়ে যাওয়া।
2।চোখে একদম অন্ধকার দেখা বা কোন কিছু দুটো করে দেখা।
3।হঠাৎ করে অনেক বেশি তীব্র মাথা ব্যথা করা।
4। জ্ঞান হারিয়ে ফেলা বা চলাফেরায় ভারসাম্যহীনতা।
ওপরের উপসর্গগুলোর মধ্য যে কোন উপসর্গ কিছু সময়ের জন্য থাকার পর নিজে নিজে সেরা ওটাই হল মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ। সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক ঘন্টার মধ্যেই রোগী আবার সুস্থ বোধ করেন মিনি স্ট্রোক হলে।
মিনি স্ট্রোকের সর্তকতা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কয়েক মিনিট বা এক ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে যাওয়ার কারণে মিনি স্ট্রোক বাটি নিয়ে অনেকেই মাথা ঘামান না, ঠিক হয়ে যাওয়ার পরপরই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয় না। কিন্তু আবার দেখা যায় কিছুদিন পরে পূর্ণাঙ্গ স্ট্রোক বা বিপদ ঘটে যেতে পারে এজন্যই এমন সমস্যায় সচেতন হতে হবে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য মিনি স্ট্রোকের রোগীদের যেগুলো করা উচিত।
1।ধূমপান করা যাবে না।
2। টোকা লবণ খাওয়া কমাতে হবে এবং চর্বি ও তেলযুক্ত খাবার পরিহার করে চলতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
3। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
4। নিয়মিত হাঁটতে হবে এবং ওজন শরীর অনুযায়ী সঠিক ওজন রাখত হবে।
5।অবশ্যই মিনি স্ট্রোক কে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ
সাধারণ পর্যায়ের অনেক মানুষ নিয়ে ব্রেন স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাক একই বিষয় মনে করে গুলিয়ে ফেলে। কিন্তু বাস্তবতার হার্ট অ্যাটাক দুটোই একদম আলাদা রোগ। চলুন প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো।
1।হাত পা অবশ হয়ে যায়, জুতার ফিতা বাঁধতে সমস্যা অনুভব করা।
2।কথা জড়িয়ে বেসামাল হয়ে যাওয়া,ঘাড়ে মাথা অসহ্য ব্যথা অনুভব করা।
3।সাথে বমি বমি ভাব জ্ঞান হারিয়ে ফেলা,খিঁচুনি হতে পারে।
4।এ রোগে শরীরের বাম সাইড একদম অবশ হয়ে যায়, আবার অনেক মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে যায়।
5। হঠাৎ করে কোন কিছু বুঝতে পারেনা সাধারণ রকমের গণনা করতে অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
ব্রেন স্ট্রোকের রোগীদের খাবার তালিকা
বর্তমান বিশ্বে একটি প্রাণঘাতী রোগ হল স্ট্রোক। স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে-মস্তিষ্কের রক্ত জমাট বাধলে কি হয় এবং অপরটি রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।স্ট্রোকের রোগীদের খাদ্য সংক্রান্ত মূল সমস্যা হলো খাবার চিবোতে অথবা গিলতে সমস্যা হওয়া।এ জন্য মারাত্মক আকারের খাবার বা পানীয় গ্রহণের পরিমাণ কমে আসে,এবং দেখা দেয় পানিশূন্যতা।প্রায় 25 থেকে 35 শতাংশ স্ট্রোকের রোগীরা।এই জন্য প্রথমে ওজন,উচ্চতা ও বয়স ক্লিনিক্যাল প্যারামিটার এর মাধ্যমে রোগীর পুষ্টিগত অবস্থা নির্ণয় করে নিতে হবে।
রক্ত ক্ষরণ জনিত রোগ হলে রোগীর রক্তপাত বন্ধ করার জন্য ভিটামিন কে যুক্ত খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে(সবুজ শাক, মসুর ডাল,ফুলকপি,ঢেঁড়স,বাঁধাকপি ইত্যাদি)।মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যাবে।তাই প্রথমে নিজের কিডনির কার্যকারিতা সঠিকভাবে নিরূপণ করে নিতে হবে।দৈনিক দুইটি করে ডিমের সাদা অংশ। চাকরিতে পারতেছ না অথবা মানুষের খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্রমস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্র বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় খাবার ভূমিকা অনেক বেশি, যেমন: দুধ,ডিম,মাংস,রঙিন-শাকসবজি ইত্যাদি।
মানুষের ক্ষেত্রে ইলেকট্রোলাইটের অসামাঞ্জস্য দেখা যায়, তাই সে ক্ষেত্রে রক্তের পটাশিয়াম সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে উপযোগী খাবার তালিকা অবশ্যই তৈরি করতে হবে। যাদের ফ কোলেস্টেরল এর মাত্রা অনেক বেশি, তাদের বলে চর্বি পরিহার চলতে হবে। এবং পাশাপাশি এ খাবারের মোট তেলের রান্নার পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। কলিজা, মাথা, মাছের মাথা, গিলা, মাছের ডিম এড়িয়ে চলতে হবে। কিন্তু এর পাশাপাশি যাদের ভালো কোলেস্টেরল অর্থাৎ এইচডি-2 বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে অন্তত সপ্তাহে দুই দিন।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা। রক্তে যদি অতিরিক্ত সুগার থাকে তবে সেটি স্ট্রোকের রোগীর আরবিক শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটাতে পারে। রক্তের কোলেস্টেরল ও সুগারের মাত্রা যুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে।অনেকক্ষেত্রে আবার রোগীর খাবার গ্রহণের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। রোগীদের জন্য কনসেনট্রেট ক্যালরিযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে, যেমন: বাদাম, খেজুর, কলা, চিড়া, অলিভ অয়েল, কিসমিস, আলু, মধু ইত্যাদি।
উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে অবশ্যই স্ট্রোকের সমস্যা থেকে সবাই দূরে থাকতে পারবে।
0 মন্তব্যসমূহ