ইসলামিক গল্প

 


ইসলামিক জীবন

আমাদের আজকের লেখায় আমরা আপনাদেরকে  কবরের ভয় এবং ইসলামিক জীবন  সম্পর্কে একটি সুন্দর গল্প তুলে ধরবো,  গল্পটি বাদশা হারুন অর রশিদ ও তার  ছেলের ইসলামিক জীবনের আদর্শ  নিয়ে

বাদশা হারুনুর রশিদ তার ছেলের  হৃদয়বিদারক কাহিনী

বাদশা হারুন অর রশিদ এর একটি ছেলে ছিলবয়স  16/17, সর্বদা সাধারণ মানুষের মতো চলতে পছন্দ করততার পোশাক-আশাক ছিল খুবই সাধারণ।  ছেলেটি দিনের অধিকাংশ সময় কবরের পাশে কাটাত এবং কবরবাসীর উদ্দেশ্যে বলতো একদিন এই দুনিয়ার মালিক ছিলে, কতইনা প্রভাব শক্তির অধিকারী ছিলে তোমরাকিন্তু আজ তোমরা তোমাদের সম্পত্তির প্রভাব-ক্ষমতা প্রিয়জন সবাইকে ছেড়ে এই নির্জন কবরে একা একা  শুয়ে আছো। আমি যদি জানতে পারতাম তোমাদের সাথে কবরে কি হচ্ছেকেমন ব্যবহার করা হচ্ছে তোমাদের প্রতিকতটুকু আমল তোমরা পৃথিবীতে করে যেতে পেরেছিলে।  কবরের পাশে এসব বলতেন আর আল্লাহর কাছে সব সময় ক্ষমা চাইতেন,   মহান আল্লাহর জিকিরে সবসময় নিজেকে নিয়ে মশগুল থাকতেন। 

 

একদিন বাদশা হারুনুর রশিদের সভাকক্ষে সবাই সমবেত হয়েছে এমন সময় তার ছেলে সভাকক্ষে এসে হাজির হয় খুবই সাধারণ একটি পোশাক পড়ে।  তখন সবাই বলাবলি করতে লাগল বাদশার ছেলে আমাদের বাদশাকে অন্যান্য বাদশার সামনে প্রতিনিয়তই ছোট করেতাকে কি এমন সাধারণ বেশভূষায় মানায়সে আমাদের বাদশার ছেলে, তাকে তো সেভাবেই থাকতে হবে।  এসব কথা বাদশা হারুন অর রশিদের কানে গেল সে তার ছেলেকে বললেন তুমি কি আমাকে  অন্য অন্য বাদশার সামনে ছোট করতে চাও? তুমি এমন সাধারণ পোশাক পড়ে আছো কেন? তুমি তো চাইলেই অনেক দামে রেশমী কাপড়ের পোশাক করতে পারো।  তখন ছেলেটি বাদশাকে বলল আল্লাহ আপনাকে বিপথগামীদের কাতারে না রাখুন, আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুকএবং সে তার পিতা কে বলল আমি আর আপনার সাথে এই প্রাসাদে থাকতে চাই নাআমি অন্য কোথাও আলাদাভাবে আমার নিজের মতো করে জীবন যাপন করতে চাইএই বলে সে পিতার কাছ থেকে বিদায় নিল।  বিদায় নেওয়ার সময় বাদশা তাকে একটু দামি আংটি দিলেন যেন বিপদের সময় সেটি বিক্রি করে চলতে পারে।

ছেলেটি জঙ্গলের পাশে একটি শহরে আসলো এবং সেখানে দিনমজুরের কাজ  করতে লাগলো।  কিন্তু সে সপ্তায় শনিবারে কাজ করত আর যে টাকা পেত সেই টাকা দিয়ে বাকি সাত দিন চলত এবং অন্য 6 দিন জঙ্গলে গিয়ে আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকতো। একদিন এক ধনী ব্যক্তির একটি দেয়াল ভেঙে পড়ল সে দেয়াল তিলাওয়াত করার জন্য একজন মিস্ত্রি বা দিনমজুর খুজতে ছিলএকজন লোক একটি পালক কে দেখিয়ে বলল আপনি ওই ছেলেটিকে বলেন সে আপনার দেয়াল ঠিক করে দিবে।  ধনী  লোকটি বালকের কাছে গিয়ে দেখল বালকটি কোরআন তেলাওয়াত করছে তখন সে বালকটিকে বলল তুমি কি আমার দেয়ালটি ঠিক করে দিতে পারবে বা আজকের দিনের জন্য আমার হয়ে কাজ করবে।  বালকটি বলল হ্যাঁ অবশ্যই আমিতো কাজ করার জন্য এখানে বসে আছিতবে আমার কিছু শর্ত আছে, আমি নামাজের সময় কাজ করব না এবং সে তার নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের কথা বলললোকটি তাতে রাজি হয়ে তাকে দেয়াল মেরামতের কাজে লাগিয়ে দিলেন।  মাগরিবের দিকে মালিক ফিরে এসে দেয়ালটি দেখে অবাক হয়ে গেলেন দেখলেন বালকটি একাই প্রায় 8 থেকে 10 জন দিনমজুরের কাজ করে ফেলেছে।  ধনী লোকটি তাকে পারিশ্রমিকের সাথে কিছু বকশিশ দিলেন কিন্তু বালকটি বকশিশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে সে তার প্রাপ্য পারিশ্রমিক নিয়ে বিদায় হলো।  কাজের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট হল এবং তাকে পরের দিন আবার খুঁজতে লাগলো কিন্তু তাকে কোথাও খুঁজে পেল না। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে যে লোকটি তার সন্ধান দিয়েছিল তাকে খুঁজে বের করললোকটি তাকে বলল সে তো সপ্তাহে একদিন শুধু কাজ করে বাকি ছয় দিন জঙ্গলে বসে কাটায়। 



ধনী লোকটি বালকটির কাজ খুবই পছন্দ হয়েছিল তাই সে ছয় দিন অপেক্ষা করল আবার শনিবার আসলে সে দেখতে পেল বালকটি আবার উক্ত জায়গায় বসে কোরআন তেলাওয়াত করছে।  সে তাকে আবার নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক এবং তার শর্ত অনুযায়ী নিয়ে আসলো এবং  দেয়ালের কাজ করতে বললেন।  ধনী লোকটি মাগরিবের সময় দেয়ালের কাছে এসে দেখল সে 8/10 জন শ্রমিকের কাজ একাই করে  ফেলেছে।  এবার এসে তাকে তার নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের সাথে কিছু বকশিশ দিতে চাইলেন কিন্তু সে নিতে অস্বীকৃতি জানালে সে শুধু তার নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক নিয়ে বিদায় হলো।  পরের দিন আবার লোকটি তাকে কাজের জন্য খুঁজতে লাগলেন কিন্তু কোথাও পেলেন অবশেষে আমার অপেক্ষা করল এবং পরের শনিবার তাকে তার কাজের জন্য তার শর্ত অনুযায়ী নিয়ে আসলো।  

এবার লোকটি খুবই কৌতুহলী ছিল যে বালকটি একা কিভাবে 8 থেকে 10 জন শ্রমিকের কাজ একা করে তাই সে গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে বালকটির কাজ পরিদর্শন করছিল। সে দেখতে পেলো বালকটি কাদামাটি ইট দেয়ালের উপর রাখতেই সেটা আপনা আপনি একটা আরেকটি সাথে  দেয়ালটি গেথে যাচ্ছে, সে বুঝতে পারল বালকটি  কোন সাধারন বালক নয় সে আল্লাহর অনুগত বান্দা। তাই সে কাজ করার সময় গায়েবি সাহায্য পায়কাজ শেষ হলে সন্ধ্যার দিকে ধনী লোকটি বালকটিকে তার পারিশ্রমিকের সাথে অনেক বকশিশ দিতে চাইলেন কিন্তু বালকটি কোন বকশিশ না নিয়ে শুধু তার পারিশ্রমিক নিয়ে ফিরে গেলে।  এরপর অনেকদিন ধনী লোকটি এই বালকটিকে খোঁজাখুঁজির পরেও তার সন্ধান না পেয়ে যে লোকটি তার সন্ধান দিতে তার কাছে গেল এবং তার থেকে খবর পেল যে বালকটি খুবই অসুস্থ। 

 

ধনী লোকটি সন্ধানদাতা ব্যক্তিটিকেও বালকটি সন্ধান দিতে বললেন এবং সে তাকে সাথে করে জঙ্গলে বালকটির কাছে গেলেন।  দেখলেন বালকটি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে তার মাথার নিচে একটি ভাঙা ইট।  ধনী লোকটি বালকটির মাথা থেকে সরিয়ে তার কোলের উপর রাখলেনবালকটি ধনী লোক কে চিনতে পারলেন এবং বললেন আমি মারা গেলে আমাকে আমি যে পোশাক পড়ে আছে সেই পোশাকেই  যেন কবর দেওয়া হয়।  এবার ধনী লোকটি খুবই অবাক হয়ে গেলেন এবং বললেন কেন নতুন কাপড়ে কবর দিলে কি সমস্যাবালকটি বললেন নতুন কাপড়টিও একসময়  পুরাতন হয়ে যাবে, আর তাছাড়া কবরের জীবনে কাপড়ের কোন মূল্য নেই আমার আমলনামায় শুধু আমার সাথে যাবে।  তাই আমি মারা গেলে নতুন কাপড় দিয়ে নয় আমার এই কাপড় দিয়ে আমাকে কবর দিবেন।  আর আমার হাতের আংটি বাদশা হারুনুর রশিদ এর নিকট পৌঁছে দিয়ে বলবেন একপরদেশি ভালো মৃত্যুর পূর্বে আংটি তাকে ফেরত দিতে   বলে গেছে। একটু পরে বালকটি মারা গেলএর কিছুক্ষণ পরই সবাই  জানতে পারল বালকটি ছিল বাদশা হারুন অর রশিদ এর একমাত্র ছেলে অর্থাৎ শাহজাদা।  তখন সবাই বিস্ময়ের দৃষ্টিতে বালকটির দিকে তাকিয়ে থাকলেন এবং ভাবলেন কেমন তাকওয়াবানআজ শক্তিমানের অধিকারী হলে বাদশাহের ছেলে হয়েও এমন সাধারণ জীবনযাপন আর সারাক্ষণ আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকা যায়।

 

পরিশেষে বলছে গল্পটি থেকে আমাদের শিক্ষনীয় বিষয় হলো আমাদের দুনিয়ার অর্থ-সম্পদক্ষমতা শক্তি কোন কিছুই আমাদের কবরের জীবনের সঙ্গী হবে না।  আমাদের কবরের জীবনের একমাত্র সঙ্গী হচ্ছে আমাদের  আমলনামা।  তাই ততটুকুই অর্থের পিছনে আমাদের দৌড়ানো উচিত যতটুকু আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন বাকিটা সময় আমাদের আল্লাহর ইবাদতে কাটানো উচিত। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে শুধুমাত্র আমাদের আমলনামায় হতে পারে আমাদের একমাত্র সঙ্গী  বা অবলম্বনআর মৃত্যুর পরে আমলনামা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেইতাই আমাদের যা করতে হবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অবস্থায় আমাদের মৃত্যুর পরবর্তী জীবন অর্থাৎ  কবরের জীবন শেষ বিচারে ভালো কিছু পেতে হলে অবশ্যই আমাদের আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে এরকম আরো ভালো ভালো ইসলামিক গল্প পেতে আমাদের পেজটি  ফলো করুন- ধন্যবাদ।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ