অ্যালোভেরার উপকারিতা
দিন দিন অ্যালোভেরার উপকারিতা যেন বেড়েই চলেছে রূপচর্চা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সেবা চুলের যত্নে এলোভেরা। অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে আগে জানতে হবে অ্যালোভেরা অ্যালোভেরা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তবে চলুন জেনে নেয়া যাক এলোভেরা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য।
অ্যালোভেরা কি ?
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী যাই বলে থাকি না কেন এটির পরিচিতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। বহু রকমের গুণে গুণান্বিত এই ভেষজ উদ্ভিদ। অ্যালোভেরার গুণ এর যেন শেষ নেই, এতে রয়েছে সোডিয়াম,ক্যালসিয়াম,আয়রন,ম্যাঙ্গানিজ,পটাশিয়াম,ফলিক এসিড,অ্যামিনো এসিড ও ভিটামিনএ, বি6,বি2 ইত্যাদি।অ্যালোভেরা শুধু রূপচর্চায় নয় এটি স্বাস্থ্য রক্ষায় ও ব্যবহার হচ্ছে অনেক বেশি।
এলোভেরার বৈজ্ঞানিক নাম হল Aloe vera,ইংরেজিতে হলো Medicinal aloe, Burn plant।এটি একটি রসালো উদ্ভিদ প্রজাতি।অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী গাছটা দেখতে অনেকটাই ক্যাকটাস বা কাঁটাওয়ালা ফনিমনসা উদ্ভিদের মতো কিন্তু এটি ক্যাকটাসের মতো দেখতে হলেও স্ট্যাটাস নয়,এটি লিলি প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। আজ থেকে প্রায় 600 বছর আগে মিশরে অ্যালোভেরার উৎপত্তি লাভ হয় এবং দেখা যায় যে খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার পাওয়া যায়। তখন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অ্যালোভেরার প্রায় অনেক রকমের গুণের কথা আবিষ্কৃত হয়েছে এবং সময়ের সাথে সাথে যেন অ্যালোভেরার ব্যবহার বেড়েই চলেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্ময়কর উপকারিতা।
অ্যালোভেরার উপকারিতা
হার্ট সুস্থ রাখে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা জুস হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টরেলের কমিয়ে দেয়।এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে ও ও রক্তে অক্সিজেন বহন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়,এছাড়াও দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে দিয়ে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ফলে দীর্ঘদিন হৃদযন্ত্র সুস্থ ও ভালো থাকে।
দাঁতের ক্ষয় রোধে,মুখের ঘা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এলোভেরা
দাঁত ও মাড়ির ব্যথা উপশম করে থাকে অ্যালোভেরার জুস এবং যাতে কোন প্রকার ইনফেকশন থাকলে তাও দূর করে দেয় এছাড়া নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ফলে দাঁতের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব।অনেকের মুখে ঘা হয় আরে মুখের ঘা সারাতে অনেক বেশী কার্যকর অ্যালোভেরা। মুখে ঘা হয় সেই যায় অ্যালবাম লাগিয়ে অনেক মুখের ভালো হয়ে।আবার অনেকের মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় বিভিন্ন কারণে, আর এই দুর্গন্ধ দূর করতে এলোভেরা একটি অন্যতম সমাধান। অ্যালোভেরা রয়েছে ভিটামিন সি যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে এবং মাড়ি ফোলা বন্ধ করে। এছাড়াও গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছে যে অ্যালোভেরার জেল মাউসের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায় আর এটি ব্যবহার করলে মুখের সকল প্রকার দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়।
ওজন হ্রাস করতে অ্যালোভেরা
ক্রনিক প্রদাহের কারণে শরীরে অনেক বেশি মেদ জমে। অ্যালোভেরার জুসের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেনটরি উপাদান শরীরের এই প্রদাহ রোধ করে ওজন হ্রাস করে থাকে এবং পুষ্টিবিজ্ঞান এসব কারণে প্রায় সময়ই ডায়েট লিস্ট অ্যালোভেরা জুস রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অ্যালোভেরা
দেহে রক্ত সঞ্চালন ও রক্তের সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে অ্যালোভেরা জুস তাই ডায়াবেটিস এর শুরুর দিকে প্রতিদিন নিয়ম করে এলোভেরা জুস খাওয়া গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব,তাই প্রতিদিন খাওয়ার আগে বা খাওয়ার পরে নিয়ম করে অ্যালোভেরা জুস পান করুন তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা হলো একটি অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ গাছ।সুতরাং অ্যালোভেরা জুস নিয়মিত পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের টক্সিন জাতীয় উপাদান দূর করে দেহ সুস্থ রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা
এলোভেরা জুস হজম শক্তি বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর এটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে। এছাড়া ইনফ্লামেশন এবং ব্যাকটেরিয়া করে বুক জ্বালাপোড়া, হজম ইত্যাদি রকমের সমস্যা সমাধান করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা
গবেষকরা গবেষণায় দেখেছেন যে, অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো ইমোডিন যেটি স্তন ক্যান্সার রোধ করে থাকে, এছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার
এখনকার দিনে প্রায় প্রত্যেক নারী চায় সুন্দর সতেজ ত্বক আর ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অ্যালোভেরার কোন তুলনা হয় না অ্যালোভেরার।গৃষ্ম কালে অ্যালোভেরা ত্বকের খুবই ভালো কাজ করে কারণ এলোভেরাতে প্রায় 98 শতাংশই থাকে পানি যা ত্বকের যত্নের জন্য বেশ কার্যকর।অ্যালোভেরা অ্যান্টিসেপটিক,অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, anti-inflammatory ওঅ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সমৃদ্ধ হয়ে থাকে, যার জন্য অ্যালোভেরা চোখের চারপাশে কালো দাগ দূর করে,ব্রণের বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর হয় এবং লোমকূপও সংকুচিত হয়ে থাকে।এ্যালোভেরা ত্বকের পাশাপাশি চুলের যত্নেও খুবই ভালো কাজ করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ত্বক ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার।
অ্যালোভেরা ব্যবহারের নিয়ম
মধু ও অ্যালোভেরার জেল ব্যবহারের নিয়ম
ব্রণ ও তৈলাক্ত ত্বকের তেলতেলে ভাব কমাতে অ্যালোভেরা জেল অনেক ভালো কাজ করে। অ্যালোভেরা মধু এবং ভিটামিন ই ভালো মতো মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায় ও ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে।
গোলাপ ও অ্যালোভেরার টোনার ব্যবহারের উপকারিতা
অ্যালোভেরার ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সহায়তা করে ও গোলাপজল একসঙ্গে অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে প্রতিদিন গোসলের পরে ব্যবহার করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ,এটি ব্যবহারে স্কিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং স্কিনকে টানটান করে তুলে।
লেবু ও অ্যালোভেরার প্যাক ব্যবহার
অ্যালোভেরা ও লেবু দুটোই খুবই শক্তিশালী অ্যান্টি-এইজিং উপাদান সমৃদ্ধ। এই দুটি উপাদান ত্বককে আদ্র রাখতে ও ত্বকের দাগ কমাতে সহায়তা করে থাকে। এই প্যাকটি তৈরীর জন্য প্রথমে একটি বাটিতে এক টেবিল-চামচ অ্যালোভেরা, আধা টেবিল চামচ লেবুর রস এবং একটি ডিমের সাদা অংশ নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে হবে,এরপর তকে এই প্যাকটি ভালোভাবে মেখে 15 থেকে 20 মিনিট অপেক্ষা করে থাকতে হবে। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে 2 বার এই প্যাকটি ব্যবহার করলে।ত্বকের বয়সের ছাপ ও ত্বককে দাগহীন করে তুলবে।এছাড়াও অ্যালোভেরায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা রোদে পোড়া ভাব কমায়।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার
অ্যালোভেরা হল অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা সমৃদ্ধ,এতে রয়েছে ছয় ধরনের অ্যান্টিসেপটিক এজেন্ট,যার মধ্যে রয়েছে স্যালিসিলিক এসিড,ইউরিয়া,নাইট্রোজেন,ফেনোল,সিনামননিক অ্যাসিড এবং সালফার। এই সকল উপাদানের উপস্থিতির কারণে এটি মাথার ত্বককে সংক্রমণ থেকে খুব সহজে রক্ষা করতে পারে এর পাশাপাশি এটি চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে ও এটি চুলে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। চলুন এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহার করার নিয়ম।
মধু এবং অ্যালোভেরার ব্যবহার
অ্যালোভেরা ও মধু চুলের বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। মধু হলো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল (ব্যাকটেরিয়া নিধন),এন্টিফাঙ্গাল (ছত্রাক নিধন) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই সমস্ত প্রভাবের কারণে মধু ,এলোভেরা ও নারকেল তেল চুলের খুশকি এবং চুল পড়া সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি দিতে সাহায্য করে।এই মিশ্রণটি বানাতে প্রথমে 3 টেবিল চামচ নারকেল তেল, 5 চা চামচ অ্যালোভেরা জেল ও 2 টেবিল চামচ মধু একটি কাপে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে এবং এতে 10 থেকে 15 মিনিট ধরে তৈরি করতে হবে,এরপর এই মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগাতে হবে কারণ চুলের এই অংশটি বেশি নষ্ট হয়ে যায়। * লাগানোর পরে একটি টুপি বা তলা দিয়ে আধাঘন্টা চুলগুলো আটকে রাখতে হবে। তারপর কন্ডিশনার এবং শ্যাম্পু লাগিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এটি প্রতি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে চুলকে করে তুলবে অনেক সুন্দর।
ডিম এবং এলোভেরা দিয়ে চুলের যত্ন
এনভিডিয়া ইকোট্রিম সম্পর্কিত একটি গবেষণায় স্পষ্ট ভাবে স্বীকৃত করা হয়েছে যে ডিমের কুসুম চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী ডিমের কুসুমে পাওয়া গেছে চুল বৃদ্ধি করে পেপটাইড। এর সাথে অ্যালোভেরা জেল ও চুলের জন্য খুবই কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। এলোভেরা দিয়ে চুলের যত্ন করলে চুল অনেক বেশি ঝলমলে ও সিল্কি হবে। এই মিশ্রণটি বানানোর জন্য প্রথমে একটি কাপে 3 টেবিল চামচ পরিমাণ অলিভ অয়েল,একটি ডিমের কুসুম ও 4 টেবিল-চামচ তাজা অ্যালোভেরা জেল নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে।এরপর চুলে ও মাথার তালুতে ভালো ভাবে লাগাতে হবে,এই পেস্ট দিয়ে চুলের গোড়ায় ও পুরো চুলে ভালো ভাবে লাগাতে হবে তারপর চুলকে টাওয়েল কিংবা শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ভালোভাবে আটকে নিতে হবে। এরপর এটিকে প্রায় 20 থেকে 25 মিনিট এভাবে রেখে দিতে হবে সময় শেষ হওয়ার পর চুলকে ভালোভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে তারপরে অনেক বেশি হালকা সিল্কি ও ঝলমলে প্রাণবন্ত দেখা যাবে।
এরকম আরো ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাইটটি ফলো করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন, ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ