হযরত সালেহ আঃ এর জীবনী ও সামুদ জাতি ধ্বংসের ইতিহাস

 

হযরত সালেহ আঃ এর জীবনী


ইসলামিক জীবন

আজকে আমরা আপনাদেরকে ইসলামিক জীবন সম্পর্কে হযরত সালেহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সামুদ জাতির ধ্বংসের কারণ  তুলে ধরবো,   এটি একটি ইসলামিক ইতিহাস এখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি এবং ঘটতে পারে একটি ইসলামিক জীবনহযরত সালেহ আলাইহি সালাম প্রেরিত হয়েছিলেন  সামুদ অর্থাৎ সাদ জাতির নবী হিসাবে হিসাবে। আরবের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাম দেশ অর্থাৎ বর্তমানে সিরিয়ার অন্তর্গত, হযরত সালেহ আলাইহি সাল্লাম সামুদ জাতির পথ-প্রদর্শক হিসাবে প্রেরিত হয়। সামুদ জাতি ছিল হজরত নুহ আলাই সাল্লাম এর সন্তান  সামের বংশধর, বংশধারা কে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় একটি ভাগ পরিচিত পায় আদ জাতি হিসেবে আর অন্যটি  সাদ জাতি হিসেবে পরিচিতি পায়।  আদ জাতি নবী হিসেবে হযরত হুদ আঃ প্রেরিত হয়েছিলেন, আদ জাতি ছিল খুবই দুর্ধর্ষ আর শক্তিশালী কিন্তু তারা বিপথগামী হওয়ায় মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা তাদের জমিনে ধ্বংস করে দেয়।  আদ জাতি ধ্বংসের প্রায় পাঁচশত বছর পরে হযরত সাল্লে আলা সালাম সামুদ জাতির পথ-প্রদর্শক হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন।

 


আদ জাতির নেয় সামুদ জাতির খুবই শক্তিশালী আর পরিশ্রমী জাতি ছিলকিন্তু তারা ছিলো বিপথগামী যদিও তারা তখনও হজরত নুহ আলাই সালাম এর ঘটনা বলতো এবং সে সম্পর্কে আলোচনা করতএছাড়াও তারা আদ জাতি সম্পর্কেও আলোচনা করত। হযরত সালেহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আল্লাহর পথে আহবান করতে লাগলেন তাদের মাঝে দ্বীনের প্রচার করতে লাগলেনএতে সমাজের শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি বর্গ হযরত সালেহ আলাইহি সাল্লাম এর প্রতি বিরক্ত হয়ে উঠলেন।  তারা  ভাবলেন হযরত সালেহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ওপর নেতৃত্ব প্রদান করার চেষ্টা করছে এবং সাধারণ মানুষ তার পক্ষে চলে যাচ্ছে তাই তারা চাচ্ছিলেন হযরত  সালেহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হেয় প্রতিপন্ন করতে বা মিথ্যা প্রমাণ করতে।

 

তারা একদিন সাধারণ মানুষকে আহ্বান করলেন এবং হযরত সালেহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দাবী করলেন আমরা আপনাকে নবী বলে স্বীকার করব যদি আপনি আমাদের দাবি পূরণ করতে পারেন। আসল তাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন কিছু দাবি করা যেন হযরত সালেহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয় সে ক্ষেত্রে তারা তাকে অস্বীকার করবে এবং তার নবুওয়াত মেনে নেবে না। হযরত সালেহ আঃ বললেন বল তোমাদের দাবি কিআল্লাহর ইচ্ছায় আমি তোমাদের  দাবি পূরণ করব, কিন্তু মনে রেখো তোমাদের দাবি পূরণ হওয়ার পর যদি তোমরা আল্লাহর দাসত্ব মেনে নাওতার একাত্মতা মেনে না নাও তাহলে তোমরা ধ্বংসের মুখে পতিত হবে, তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন তারা বলে উঠলো আপনি একটি মোজেজা দেখানযে সামনের পাহাড় থেকে একটি গর্ভবতী  সতেজ উট বেরিয়ে আসবে, আপনি যদি আমাদের দাবি পূরণ করতে পারেন এমন  মুজেজা দেখাতে পারেন তাহলে আমরা আপনার নবুয়াত মেনে নেব এবং এক আল্লাহর দাসত্ব মেনে চলবো।

 

সামুদ জাতি ধ্বংসের ইতিহাস

হযরত সালেহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নামাজে বসে গেলেন এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন যেন সামনে পাহাড় থেকে একটি গর্ভবতী স্বাস্থ্যবান  উট বেরিয়ে আসে। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন এবং পাহাড় থেকে একটি গর্ভবতী স্বাস্থবান বিশালাকার উট বেরিয়ে আসলো। তখন উপস্থিত অধিকাংশই হযরত সালেহ আঃ সালামের নবুয়াত মেনে নিলেন এবং এক আল্লাহর দাসত্ব শুরু করলেন। কিন্তু সমাজের প্রভাবশালী এবং শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ সালেহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আরো বেশি ক্ষেপে গেলেন এবং তার ক্ষতি করা বা হত্যা করার চেষ্টাও করলেন। হযরত সালেহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন তোমরা কখনো উটটি মেরোনা তাহলে তোমরা ধ্বংসের মুখে পতিত হবে।উটটি খোলা মাঠে চরে বেড়াতো এবং মানুষ অন্যান্য পশু যে কুয়ো থেকে পানি পান করত উটটি সেই থেকে পানি পান করত সবার শেষে। তখন অনেকেই উটটি  হত্যা করতে  চাইল কিন্তু আল্লাহর গজবের ভয়ে কেউ সাহস হলো না অবশেষে দুই  পথভ্রষ্ট যুবক ওই শহরের সবচেয়ে সুন্দরী, রূপবতী দুই নারীর প্রলোভনে উটটিকে হত্যা করতে সম্মত হলো।  তারা উটটিকে  পা কেটে হত্যা করল এর ফলে তাদের উপর আল্লাহর গজব শুরু হয়ে গেল।

 

উটটিকে হত্যা করার মাধ্যমে সকল অবিশ্বাসীগণ মহান আল্লাহতালার গজব শিকারে পরিণত হলেনপ্রথমদিন অবিশ্বাসীদের মুখমন্ডল হলুদ বর্ণ ধারণ করলোএতে মহান আল্লাহকে ভয় না পেয়ে বরং হযরত সালেহ আঃ কে হত্যা করতে তাকে খুঁজতে থাকে। এরপর দ্বিতীয় দিন তাদের সবার মুখ মন্ডল লাল বর্ণ ধারণ করে এবং তারা ভয় পেতে শুরু করেকিন্তু তারা ঈমান আনে না।  এর পরেরদিন অবিশ্বাসীদের মুখমন্ডল কালো বর্ণ ধারণ করে এবং তারা আল্লাহর গজবের জন্য ভয় পেতে শুরু করে এবং আল্লাহর গজবের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে এরপর চতুর্থ দিন সবাই শরীরে সুগন্ধি মেখে আল্লাহর গজবের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।  রবিবার ভোরবেলা প্রকণ্ড ভূমিকম্পের মাধ্যমে সামুদ জাতি ধ্বংস হয়ে যায়, এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যায় যেন মনে হয় সেখানে তারা কোনদিন ছিলই না। 

 

সামুদ জাতি হযরত সালেহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা 22 টি সূরা 87 টি আয়াতে উল্লেখ করেছেন, তিনি আমাদেরকে আহ্বান করেছেন তার পথে চলার এবং সামুদ জাতি থেকে শিক্ষা নেওয়াসামুদ জাতি সহ সর্বমোট 6 টি জাতিকে মহান আল্লাহতালা   গজবের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমাদের উচিত সামুদ জাতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং মহান আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব করা শুধুমাত্র তাঁরই এবাদত করা, এবং দুনিয়ার প্রতি মায়া ত্যাগ করে আখিরাতের জন্য কাজ করা। 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ